বুধবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

অন্য কেউ


আমার রাজপথ ভেঙে গেছে 
একটু মেরামত করে দাও।
সরকার প্রশ্ন করে, তুমি কি এদেশের কেউ?
আমি জোর গলায় বলি, নাগরিক আমি!
বলে, কাগজ দেখাও!
আমি বলি, আমার চৌদ্দ পুরুষের দেশ এটা!
ধমক গর্জে ওঠে, প্রমাণ দেখাও!

বাড়ি ফিরে মরচে পড়া বাক্স খুলি, 
পুরনো কাগজের ভ্যাপসা গন্ধ,
ধুসর কাগজের স্তর উঠে আসে 
১৯৬৬, ১৯৫১, ১৯৩২, ১৮৮৬, ১৮১২...
সগর্বে সরকারকে বলি, এই নাও কাগজ!
বলে, ইয়ার্কি নাকি?
তোমার শতবর্ষ প্রাচীন কাগজ দিয়ে
আমি কি তাবিজ বানাবো?
এসবের প্রমাণ আমার কাছে নেই। 
বলি, হুজুর এও কি আমার দায়?
বলে, তো আমি খুঁজব নাকি?
অবশেষে ৬৬ গৃহীত হল।

এবার আবার গেলাম আবেদন নিয়ে,
আমার বাচ্চার স্কুলে শিক্ষক নেই। 
আবার প্রশ্ন, কে তুমি?
হুজুর নাগরিক আমি, তালিকায় নাম আছে।
কে তুলেছে তোমার নাম?
তোমার ভাষা, চেহারা, সংস্কৃতি এদেশের নয়।
কে দিয়েছে তোমার এই কাগজ?
বলি, আপনিই তো দিয়েছেন।
আমরা আবার দেখব, এই সব তোমার জালিয়াতি।

আমার পায়ের নিচের মাটি
যেন সরিয়ে  নিল এই কথাটির ঢেউ।
আমি কি তবে এবার থেকে অন্য কেউ?
ওই আকাশে রাতের বেলা জ্বলে ওঠে তারা।
সেখান থেকে এলাম নাকি?
আমার চারপাশের এই বাতাস বুঝি হঠাৎ হল পর।
হ্যাঁ, সত্যিই তো, হঠাৎ করেই রাত্রি এল।
অন্য জগত ডাক দিয়েছে দুহাত তুলে
এতো আদর এখানে নেই আর, 
চল না একটু আরাম করি।

ওপার থেকে দেখি চেয়ে কাঁদছে পরিজন,
তিন ভুবনের চার সীমানায় শান্তি কোথাও নেই।

২০/৬/২০১৯

আমি থানকিলা


আখতাউ খিয়াল অয়,
বিড়ির কানা আলা পাঞ্জাবি লাগাই,
মাথাত গাদ্ধা তকি পিন্ধি,
কচুয়া রঙ্গর লঙ্গি আর প্লাস্টিকর জুত্তা।
আর চিল্লাইয়া কই, 'আমি থানকিলা!'

২০/৬/২০১৮

অজানা ভয়



অনেক অশ্রু, রক্ত, ঘাম ঝরে
কিছু শুকিয়ে যায়,
কিছু বৃষ্টি এলে হামাগুড়ি দিয়ে
গড়খাই, মদ্রি, বাদ্রি হয়ে
বরাকের জল পায়,

আমি সেই জল হাতে নিয়ে চীৎকার করি,
কেউ স্নান করে আনমনে,
কেউ মনে মনে হাসে

আসলে সবাই ভীষণ ভীত?

১৯/৫/২০১৩

বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৩

ডাঃ কেনোয়ার

ডা. কুইন্টিন ডেলবার্ট কেনোয়ার। কিংবদন্তী ডাক্তার কেনোয়ার ছিলেন বাঁশকান্দি সংলগ্ন আলিপুরের বিএমসি হাসপাতালের কর্ণধার। বহু বছর পর তিনি এসেছিলেন আবার। এই সুযোগে আব্বার উদ্যোগে ফ্রি কোচিং ওয়ার্কশপ এর তরফ থেকে সম্বর্ধনা সভার আয়োজন করা হয়। সভার শেষে আমাদের ঘরে আপ্যায়নের ফাঁকে এই ছবি তোলা হয়েছিল। সঙ্গে রয়েছেন তাঁর দীর্ঘদিনের সহচর প্রয়াত ডাক্তার আব্দুল মতিন লস্কর। পেছনে দাঁড়িয়ে আমার পাশে আব্বা, সব আয়োজন করে আড়ালে থাকাটাই ছিল তাঁর স্বভাব। তিনজন‌ই চলে গেলেন ইহলোক ছেড়ে। আমার সঙ্গে আব্বার সহকারী বিজ্ঞান শিক্ষক সাজ উদ্দিন লস্কর, Mahmud H Barbhuiya , পেছনে দাঁড়িয়ে বিজন চক্রবর্তী। কয়েকদিন আগে এই ফটো পেয়েছি ভাতিজা Mamoon Barbhuiya র সৌজন্যে। 

মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৩

ছুটি মঞ্জুর


বিশ্বের সব অন্ধকার যেইখানে পড়ে,
সেখান থেকে তুমি কেন ডাকো আমারে।
তুমি তো জানোই, মাঝে মাঝে আমি ভীষণ পার্থিব।
অথবা মগ্ন থাকি সাধনায় দোকানে দোকানে।
একদিন কোন এক জটিল চক্রান্তে বিচ্ছেদ তোমার সাথে।
তপস্যা করেছি দশ মাস দশ দিন।
হাসির স্তুপে চাপা পড়ে গেছে আমার ক্রন্দন।
তারপর একদিনও যায়নি তোমায় না ভেবে।
রোজ ভাবি ফিরে যাই তোমার আঁচলে।
কিন্তু জানোনা তুমি, কী টান আছে চোখের ভাষায়, দাঁতের ঝিলিকে।
জানোনা চোখের জল আর দীর্ঘশ্বাস কী মায়া জানে।
পিঠ বেয়ে ঘাম ঝরে রক্তবিন্দু তার ওপর চড়ে।
তখন কান ভারি হয়ে আসে, শুনিনা ডাক।
তবে কারা যেন বলে গেল, কাজ শেষ হল, যেতে পারো।

১৪/৬/২০১৩

স্বাধীন প্রেম

ভালবাসা এক অধিকার বোধ,
কুক্ষিগত করে রাখার তুমুল প্রচেষ্টা,
নিজেকে ব্যাপ্ত করার নিগূঢ় ইচ্ছা,
নিজের অজান্তে ঘটে যাওয়া বিচক্ষণ চক্রান্ত,
শরীরের কণায় কণায় বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ।

এবার ভালবাসা তুমি স্বাধীন হও,
সরে যাও, স্বার্থের পাঁজর থেকে মুক্ত হও।

২৬/৬/২০১৩

সোমবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৩

নিজের জন্য

একটু ভালবাসতে চাই।
তন্দ্রা ঝেড়ে উঠে বসে আয়নায় মুখ দেখতে চাই ।
প্রসাধনীর প্রাচুর্যে ধুয়ে মুছে যাক চামড়ার ছাই।
জটা ধরা চুল থেকে ঝেড়ে ফেলে দিতে চাই অনিচ্ছা সন্ন্যাস।
পোষাকে পদচারণায় শয়নগৃহে আসুক বিন্যাস।
একটু ভালবেসে দেখি নিজেই নিজেকে।
লাল ফুল খুঁজে পাব ঋতু ব্যতিরেকে।

30/10/2015

বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৩

মৃত্যুসংবাদ (কবিতা)



তুমি যখন আসবে
তখন ঘাস ফুটে যাবে কবরে।
শীতের শিশিরের সাথে মিশিয়ে দিও
একটি ফোঁটা প্রতিবিম্ব অশ্রু।
আমার বিশ্বময় আগুনের দাউদাউ
শান্ত হয়ে যাবে।
আমার স্বয়ংক্রিয় হাতে গড়ে ওঠা বিশ্ব
উঠে দাঁড়াবে প্রাণ ফিরে পেয়ে।
আরেক সহস্রাব্দের দিকে পা বাড়াবে
সেরে নিতে ফেলে রাখা কাজ।

৫ অক্টোবর ২০১৫ ফেসবুক পোস্ট

মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারী, ২০২৩

শিক্ষা ব্যবস্থায় দোষারোপের প্রবণতাঃ অবসাদ ও আরোগ্য -- ৫

পরিচালন সমিতি নিয়ে কিছু বলতে হয়। আগেই বলেছি, এটি রহস্যময় সমাজের আর‌ও রহস্যময় প্রতিনিধি। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এক সময়ে অযোগ্য ব্যক্তিরাই নিয়োজিত হতেন স্কুল পরিচালনার কাজে। অবশেষে যোগ্যতা নির্ধারিত হয় সার্টিফিকেটের উপর ভিত্তি করে, আর দূরীভূত হয় রাজনৈতিক প্রভাব। কিন্তু পাঁচ বছর যেতে না যেতেই সেই ভুল ভেঙে যায় শাসনতন্ত্রে থাকা লোকজনের। আবার আগের অবস্থা ঘুরে এসেছে অনেকটা। ফলে তেমন কোনও ভূমিকা রাখার মতো ক্ষমতা বা যোগ্যতা এদের অনেকেরই নেই। এমনিতেই তেমন কিছু অবদান রাখার মত ক্ষমতা পরিচালন সমিতির নেই বললেই চলে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগ্যতার মাপকাঠি তো প্রায় অনুপস্থিত।
     পরিচালন সমিতি গঠনের পর সভাপতি বা সভানেত্রী ছাড়া বাকিরা ধীরে ধীরে নিজেদের গুটিয়ে নেন। ফলে বিদ্যালয়ের প্রধানের সঙ্গে যদি তার মিল থাকে তাহলে উন্নয়ন না হলেও চলে। বাকিরা একমাত্র আর্থিক অনুদানের খবর পেলেই সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ফলে রোজ দিনের তদারকি করা, দফায় দফায় বৈঠক করে যৌথ সিদ্ধান্ত নেওয়া এসব আর হয়ে ওঠে না। এমনটা না হলে তেমন দূরদর্শী ও মজবুত পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। বরং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়ে।  আর যদি মিল না থাকে তাহলে তো অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
    শিক্ষার মান উন্নত করতে হলে পরিচালন সমিতির সদস্যদের প্রশিক্ষণ দরকার। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের ওয়াকিব করা, শিক্ষার্থীদের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলা, শিক্ষকদের জন্য পরিবেশ তৈরি করা, অভিভাবকদের সক্রিয় করা ইত্যাদি অনেক কিছুই করার আছে। কিন্তু সেই সমন্বয় সাধন সম্ভব হয়ে ওঠে না। প্রশিক্ষণের নামে প্রহসন হয়। যথাসম্ভব তাদের কাছে তথ্য গোপন রাখা হয়। এতে যুগপথ ভয় ও চালাকি কাজ করে। এছাড়াও সদস্যদের মধ্যে মতভেদ জিইয়ে রাখারও চেষ্টা চলে।
   বেশিরভাগ অভিভাবক সদস্য সচেতন নন। তাই সরকারি প্রতিনিধিরাই সিদ্ধান্ত গ্রহণের মূল কারিগর। অন্যান্য সদস্যরা নিষ্ক্রিয় থাকাই শ্রেয় মনে করেন। কারণ পরিচালন কমিটির ক্ষমতা বলতে সুপারিশ করা ছাড়া তেমন কিছুই নেই। সে সুপারিশ আধিকারিকদের কান পর্যন্ত পৌঁছে না। অনেক ক্ষেত্রে এর দীর্ঘসূত্রিতা নৈরাশ্যের জন্ম দেয়। মনে হয় যেন আর করার কিছুই নেই। এরপরেও রয়েছে অন্যায় আবদার থেকে হুমকি-ধমকি পর্যন্ত। হলে অনেকেই স্বজন পোষণ, পক্ষপাত ইত্যাদিতে বাধ্য হয়ে পড়েন।
  যারা আপোষ করতে চান না, তাদের অনেক কসরত করতে হয়। মোকাবেলা করতে হয় অপমান, অপবাদ থেকে শুরু করে মিথ্যা মামলা পর্যন্ত। এত্তসবের বিনিময়ে তাঁদের ব্যক্তিগত প্রাপ্তি বলতে কিছুই থাকে না। বরং গাঁটের পয়সা খরচ করতে হয়, সময় দিতে গিয়ে নিজের পেশায় ধস ধামাতে হয়। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো আর কি! তাই শিক্ষক ছাড়া অন্য কারো পক্ষে সঠিকভাবে স্কুল পরিচালনা সম্ভব হয় না।