২০০২ সালে বাগপুরের রহিম উদ্দিন বড়ভূঁইয়া এক প্রস্তাব দিলেন একটি পত্রিকা প্রকাশ করার। সঙ্গে ছিলেন মাসতুতো ভাই রাজু আহমেদ চৌধুরি, বন্ধু কবির আহমেদ লস্কর ও আনোয়ারুল ইসলাম লস্কর। নাম দেওয়া হল ‘আজকের বরাক’। ২০০৩ সালের ১৫ এপ্রিল উন্মোচন করা হল বাঁশকান্দি নেনা মিয়া উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। অতিথি ছিলেন সাময়িক প্রসঙ্গের কর্ণধার তৈমুর রাজা চৌধুরি, উপত্যকার অগ্রণী ব্যক্তিত্ব ইমাদ উদ্দিন বুলবুল, অধ্যাপক আবিদ রাজা মজুমদার, অধ্যাপক আব্দুস সহিদ চৌধুরি, সাহিত্যিক নবদ্বীপ সিংহ, সমাজকর্মী খায়রুন নেসা চৌধুরি, আধিকারিক রণজিত কুমার লস্কর প্রমুখ। বেশ কয়েকটা সংখ্যা বের হয়। কিন্তু বেশিদুর এগোতে পারেনি। কবির তখন যুগশঙ্খ পত্রিকায় কাজ করত। আমি সেদিন তৈমুর রাজা চৌধুরির কাছে ইচ্ছা প্রকাশ করলাম সাময়িক প্রসঙ্গ-তে সাংবাদিকতা করার। তিনি কয়েকদিন পরে সম্মতি দিলেন। এদিকে সোনার কাছাড় পত্রিকায় যোগ দিল আনোয়ার। তিনজন মিলে কাজ শুরু করলাম। দিন নেই, রাত নেই। সাময়িক প্রসঙ্গ তখন সবেমাত্র দৈনিক হয়েছে। সোনার কাছাড় অন্তিম লগ্নে। স্কুটার চালিয়ে উগ্রপন্থী অধ্যুষিত পয়লাপুল থেকে শুরু করে লাডুমা, হ্মারখৌলিয়েন, শিবস্থান, শিবপুরি, কুমাছড়া, বেকড়া ইত্যাদি স্থানে যেতে হত। দেখেছি উগ্রপন্থী (ডাকাত) আর নিরাপত্তারক্ষীদের বোঝাপড়ার সহাবস্থান। শরীরের লোম খাড়া হয়ে যেত দু’দিকের বন্দুকধারীদের দেখে। ওই সময় ইন্টারনেট ছিল না। সারাদিন ঘুরে খবর সংগ্রহ করে সন্ধ্যায় ঘুরে আসতাম। তারপর শিলচর গিয়ে পত্রিকা অফিসে বসে খবর লিখে ক্যামেরার রিল কেটে ফটো দিয়ে ঝড়-বৃষ্টি-কুয়াশা-ভয়ঙ্কর অন্ধকার ভেদ করে বাড়ি ফিরে আসতাম। মাঝে মাঝে হকার না আসলে নিজে পত্রিকা বিলিও করতাম। তারপর বাঁশকান্দিতে আবুল বড়ভূঁইয়ার দোকানে বলে কয়ে একটা ফ্যাক্স ম্যাশিন আনালাম। ধীরে ধীরে ওই দোকানে ইমেলের ব্যবহার শুরু হলে ফটো পাঠানোর ব্যবস্থাও করা হল। ২০০৫ সালে দু’হাজার টাকা দিয়ে একটা মোবাইল সিম কিনলাম। একটা নোকিয়া ১১০০ মডেলের সেট পেলাম। ২০০৯ সালে সাংবাদিকতাই ছেড়ে দিলাম। ২০১২ সালে প্রান্তজ্যোতি নতুন করে যাত্রা শুরু করার পর সেখানে কিছুদিন ডেস্কে কাজ করেছি মাধব ভট্টাচার্য, সঞ্জয় রায়, অসীম দত্ত, অসীম আচার্যদের তত্ত্বাবধানে। যাতায়াতের অসুবিধা আর আয়-ব্যয়ের সামঞ্জস্য না থাকায় সেখানেও বেশিদিন কাজ করতে পারলাম না। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আবার নতুন করে নিজস্ব উদ্যোগে শুরু করেছি আরেক ধরণের সাংবাদিকতা। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর্যায় শেষ হলে তাকে বহু উপরে নিয়ে যেতে চাই।
আরও
অনেক কিছু করেছি জীবনে। সব কথা পাঠকের জন্যে নয়। তার মানে এই নয় যে এসব গোপনীয় ব্যাপার।
লিখছি না এই কারণেই যে পাঠকের অন্তরের তন্ত্রীতে সুর তুলতে পারবে না এসব। লিখে রাখব
অন্য কোথাও। আরেকটা ব্যাপার সুর তুলতে পারে, আমাদের মনে হাসি-কান্নাময় আনন্দের সঙ্গীত
বাজাতে পারে। সেটা কিন্তু পেশা নয় – প্রেম। বেশিদিন বাঁচলে বুড়ো বয়েসে লেখব। তখন এসব
কারো সোনার সংসারে হানা দিলেও হাস্যকর হবে, ঘর ভাঙবে না।
একটা
ঘটনার কথা বলি। ২০১২ সালে আমাকে কেউ গার্লফ্রেন্ডের কথা জিজ্ঞেস করত না, এমনকি বিয়ের
কথাও না – সরাসরি জিজ্ঞেস করত ছেলেমেয়ে ক’টা। এমনি এক সময়ে দিসপুরের এক লজের রিসেপশনে
কে একজন যেন হঠাৎ আমাকে ডাক দিল পেছন থেকে। ঘুরে দেখলাম বছর পঞ্চাশের জিন্স পেন্ট টি-শার্ট
পরা এক অসমিয়া ভদ্রলোক। আমাকে ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘বিয়ে করছ না কেন?’ অপরিচিত এই
মানুষটিকে আমি গুরুত্ব না দেওয়ার চেষ্টা করলাম। সে আমাকে পাঁচটা কথা বলে উধাও হয়ে গেল।
এর মধ্যে দুটি ছিল তখনকার অতীত বা বর্তমান – হুবহু মিলে গেল। তিনটি ভবিষ্যতের, তার
মধ্যে দুটি মিলেই গেছে। রইল শুধু একটা। যা হিসেব করলে ২০২১ সালে হওয়ার কথা। আমি কিন্তু
এসবে বিশ্বাস করি না। তবুও মনে একটা সুপ্ত প্রতীক্ষা রয়েছে সেই দিনটির। কোনও ভাবেই
এই সম্ভাবনা দেখিনা, কারণ যা সম্ভাবনা ছিল সব করোনার আঘাতে দুমড়ে মুচড়ে পড়েছে।