রবিবার, ১৮ জুলাই, ২০২১

গ্রামের নিকাশি ব্যবস্থা : একটি পর্যালোচনা

 







গ্রামে এক সময় জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা খুব সুন্দর ছিল। মানুষের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে একটি ছিল এই ব্যবস্থা করা ও তার পরিচর্যা করা। প্রতিটি গ্রামে আমরা যে সব নালা দেখি তার বেশির ভাগ মানুষের তৈরি। শাসকরাও খুব গুরুত্ব দিতেন এই ব্যাপারে। কিন্তু যখনই মানুষ সরকার নির্ভর হতে শুরু করল তখন থেকেই বিপর্যয় নেমে এল। কারণ মানুষ এখন আর নিজেদের নালা নিজেরা পরিষ্কার রাখে না আর করেও না। আর সরকারি ব্যবস্থায় এতে এখন জোর নেই, কারণ মাটি ভরাট করলে হিসেবে প্রচুর গরমিল করা যায়, নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক হয়ে গেলে এই কেলেঙ্কারির দরকার পড়বে না। এভাবে প্রচুর সরকারি পয়াসার অপচয় হচ্ছে, টিলা ধ্বংস করে জলাশয় ভরা হচ্ছে ও নিকাশি ব্যবস্থাকে পুরোপুরি নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। এতে ভয়ঙ্কর বিপর্যয় নেমে আসছে বা অনেকটা এসেই গেছে।

প্রাচীন ভারতের নিকাশি ব্যবস্থা বড় উন্নত ছিল। হরাপ্পা-মহেঞ্জোদারো তো এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। বৈদিক যুগেও রাজ্য বা গ্রামের কেন্দ্র বা পুরকে ঘিরে খাই খনন করা হত, এছাড়াও গ্রামের বা রাজ্যের সীমাকে ঘিরে খাই খনন করা হত। এতে জল নিষ্কাশন, জল সংরক্ষণ, জল সরবরাহ, জলপথ ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা হয়ে যেত। নিরাপত্তা বলতে বহিঃশত্রু ও বন্যপ্রাণীর আক্রমণ প্রতিহত করার কথাই বলা হচ্ছে। কাছাড়ের বাঁশকান্দি গ্রামে এ ধরণের দুটি খাই আছে, যাদের নাম গড়খাই ও পুরখাই। পুরখাই নাম বদলে পইরখাইও (পরিখা?) বলা হয়। বরাক নদীর সঙ্গে বাদ্রি উপনদী বা মদ্রি ছড়াকে সংযুক্ত করেছিল গড়খাই। কোনও শাসকের সীমা ছিল এই গড়খাই। আর পুরখাইর মাঝখানে ছিল তাঁর বা তাঁদের সদর। এর পর বরাকের গতিপথ বদলে গেল, সৃষ্ট হল তিনটি আনুয়া। কালের স্রোতে হারিয়ে গেল সেই শাসককুল। জাতীয় সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে গড়খাইর সঙ্গে আনুয়ার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হল। পুরখাই প্রায় নিশ্চিহ্ন। সেই ইতিহাস বিলুপ্ত হয়ে গেছে অবহেলায়। এমন অনেক প্রাচীন নিকাশি ব্যবস্থা আজ প্রায় নিশ্চিহ্ন  হয়ে গেছে।

নতুনের আগ্রহে প্রাচীনকে অবহেলা ও অস্বীকার করে আমরা নিজেদের এক ভয়ঙ্কর অবস্থানে নিয়ে এসেছি। কিছু জিনিস যে শ্বাশ্বত হয়, চিরন্তন হয়, সে খেয়াল আমরা রাখি না। যার প্রায়শ্চিত্ত আমাদের করতে হবে অনেক মূল্য দিয়ে। তাই আজ চারদিকে জমা জল আর জনপদে হাহাকার। গত কয়েক দশক ধরে দেশ উন্নত হয়েছে নিঃসন্দেহে। কিন্তু তার সমান্তরালে উন্নয়নের সংজ্ঞায় এক গভীর ও দীর্ঘ ফাটল ধরেছে। ব্যক্তিগত লাভের চাকচিক্যে আমাদের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে গেছে। আর অস্পষ্ট দৃষ্টি নিয়ে আমরা সেই ফাটলের দিকেই এগিয়ে চলেছি। টেকসই উন্নয়নের কথা আন্তরিকভাবে যারা বলেন তাঁরা প্রায় একঘরে। বাকি সব ওই ফাটল বড় করার কাজই করছেন।

আমদের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা গত কয়েক দশক ধরে নিকাশি ব্যবস্থাকে প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছে। আগে মানুষ নিজেদের গলির কাজ নিজেরাই করত। এখন প্রত্যেকটি গলিকেই গাড়ি চলার উপযোগী করতে প্রস্থ বাড়ানো হয়েছে। এতে প্রত্যক্ষ শিকার হয়েছে নিকাশি ব্যবস্থা। একসময় কেউ খেয়াল করেনি যে গাড়ি চলতে হলে গলিটা জলে ডুবে থাকলে চলবে না। এখন গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রত্যেকটি গলিই জলমগ্ন থাকে বর্ষাকালে। আর এ নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ-মামলা লেগেই আছে। নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় গলির উচ্চতা বাড়াতেই বাড়িগুলো জলমগ্ন হয়ে যায়। তাই জমাজল থেকে বাঁচতে বাড়ির উচ্চতা বাড়াতে হয়। বাড়িগুলো উঁচু হতেই আবার গলি ডুবে যায়, আবার গলিতে মাটি ভরানোর কাজ করতে হয়। এই অন্তহীন প্রক্রিয়া চলতেই আছে। গ্রামের গোপথ ভরে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে, যা একসময় গোবাদি পশুর চলাচল ও জল নিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত হত।

পুর্ত বিভাগের আওতায় রয়েছে জাতীয় সড়ক ও প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা। আগে এই সড়কগুলোর পাশ থেকেই মাটি তুলে উচ্চতা বৃদ্ধি করা হত। ফলে রাস্তার দুপাশে বড় বড় নালা ছিল, যা জল নিষ্কাশন ও জল সংরক্ষণ ছাড়াও মাছের যোগান দিত। এখন তো রয়েছে সহজলভ্য টিলামাটি। এভাবে সড়কের প্রস্থ ও উচ্চতা বাড়িয়ে নিকাশি ব্যবস্থাকে হত্যা করা হয়েছে। গ্রামের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ও বাজার এলাকা এখন পুঁতিগন্ধময় অস্বাস্থ্যকর। ফল-ফসল-মাছ উৎপাদন এখন কমে গেছে। ফলে রোজগার ও স্বাস্থ্য মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার সহজ শিকার বরাকের আনাচে কানাচে থাকা অজস্র টিলা। গত এক দশকে টিলাগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। মাটি কাটায় নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রাখে হরি মারে কে! পরিবেশের এত ক্ষতি করেও জমা জলের সমস্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে।

নতুন সরকার এখন নতুন বাণী নিয়ে এসেছে। পুরাতনকে চাপা দিয়ে প্রাচীনের দিকে হাত বাড়িয়ে এগিয়ে চলার চেষ্টা করছে। এই অবস্থায় প্রাচীন ভারতের নিকাশি ব্যবস্থার ঐতিহ্যকে গুরুত্ব না দিলে চলবে না। প্রাকৃতিক বা মানুষের তৈরি জলাশয় সংরক্ষণ ও খননের ব্যবস্থা করতে হবে। এগুলোকে অবৈধ দখলদারি থেকে মুক্ত করতে হবে। নতুন করে নিকাশি নালা খনন করতে হবে। সংকীর্ণ গলির নিচে হিউম পাইপ দিয়ে জল নিষ্কাশণের ব্যবস্থা করতে হবে। পুর্ত বিভাগের আওতায় থাকা সড়কের দুপাশে প্রশস্ত নালা খনন করতে হবে। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় অর্থ সঠিকভাবে ব্যয় করতে হবে। খাস জমিগুলো যেন মানুষের লোভের শিকার না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

মঙ্গলবার, ১৩ জুলাই, ২০২১

সামান্য দাবি

 লক্ষ কোটি বর্ষ ধরে অবিরাম ঝরে

জীবনের ধারা।
যারা জানে না, যারা বোঝে না
ভাগ করে তারা।
হে পথিক, একটু দাঁড়াও, বিশ্রাম নাও
জীবনের পথ শেষে মরণের নিশ্ছিদ্র নিশ্চিন্তে।
অবশেষ কুড়িয়ে নিয়ে চলার শক্তি দাও,
একটু ভালবাসা দাও।
একটু ভালোবাসা দাও
লক্ষ কোটি বর্ষ নিংড়ে,
এক ফোঁটা অমূল্য অমৃত
অবশিষ্ট পথ চলার রসদ।
৯/৭/২০২১

বুধবার, ২৩ জুন, ২০২১

প্রতিস্থাপন

জানি তুমি বটবৃক্ষের মতো
দুর্বল অথচ দৃঢ় পায়ে
আশ্রয় নিতে চাও এ গায়ে।
ক্ষতি নেই লাগে আপাতত।
তার পর তুমি ধীরে ধীরে
নিজেই় হয়ে ওঠো আশ্রয়,
সুজন কুজনের আলয়
মুখরিত কূজনের ভিড়ে।
আর ততক্ষণে আমি শেষ
আমি নিঃশেষ হয়েই যাই,
তোমার ফুলে ফলে চারায়
থাকে না আমার অবশেষ।
23/6/21
6:30 am

শুক্রবার, ১৮ জুন, ২০২১

মিনারের নীচে

 তুমি? কোথা আছো হে প্রিয়?

গ্রহ নয়, নক্ষত্র নয়, অন্য কোথাও।

আমি বসে আছি এই পৃথিবীতে,

যে আজ শেষ প্রায় মিনারের ভিড়ে।

আমি জানি, সব বালি, পাথর,

সমস্ত পৃতিবীই মিনার হয়ে যাবে।

তবু তুমি থেকে যাবে দূরে -- 

অনেক দূরে, নক্ষত্রের দেয়ালের ওপারে।

তাই বলি তুমি এসো এখানে।

আমাদের ঘর ভাঙে আমাদেরই নিরলস পরিশ্রমে।

ঘুমহীন চোখে দিয়ে যাও শীতল পরশ।

তারপর শুরু হবে আমাদের নতুন সকাল।


০৬/০৩/২০২০






অসীমের বাণী

তোমার সমস্ত প্রার্থনা এক অদৃশ্য বিন্দুতে রাখতে পারবে?

কী করে ভাবো যে আমার অদৃশ্য সুতো সেখানেই পড়বে?

তোমার উপাসনাস্থলে নষ্ট ধারণা উপচে পড়ছে।

নাস্তিকেরাও ভ্রমে, মোহে, অহঙ্কারে মূর্তি গড়ছে।

তোমাদের ঈশ্বরগুলো তো আমার শরীরের অংশমাত্র।

তোমার জ্ঞান-বিজ্ঞান এই শরীরের কয়েকটি কণায় ঘোরে ।

আমার অনন্ত অসীম শরীর কি শুধু তোমার জন্য?

তোমার একা খাওয়ার লোভ ভ্রান্তি মাত্র। 

তোমার দৃষ্টির বাইরের ভুবন তোমার কাছে আসবে।

এখন আবদ্ধ হও, তোমারই আত্মার দিকে যাত্রা করো।


৩০/০৩/২০২০

বৃহস্পতিবার, ৩ জুন, ২০২১

দাবি

আমার বারান্দায় রোজই আসে মেঘ ছোঁয়া রোদ
তুমি সকালের আকাশটা নিয়ে এস একবার।
অথবা বিকেলে যখন পৃথিবী মঙ্গল হয়ে যায়
তখন হাতে তুলে দাও এক টুকরো লাল মেঘ।
অহঙ্কারী দুপুর যখন নিজেতে মশগুল তখন
চিলটাকে একেবারে কাছে এনে দাও।
বিরক্তিকর নক্ষত্র সব মুছে দিয়ে
মাঝরাতের অন্ধকারে তুমি এসো।

01/06/2014

রবিবার, ৩০ মে, ২০২১

চারাগাছ

 চারাগাছ

বুকের ভিতর যাদের ঠাঁই ছিল
তারা না বলে চলে যাচ্ছে।
একজনকে উপড়ে ফেলতেই
শূন্যস্থানে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
ভয় হয়, কোনদিন না বুক ফাঁকা
হয়ে যায় বটবৃক্ষের গোড়ার মতো।
ভয় হয়, কোনদিন এই বুক‌ই
যদি বটবৃক্ষ হয়ে ঘূর্ণির কবলে পড়ে।
কার সাথে বীরত্ব দেখাবো যুদ্ধ করে
শুধু অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াই।
অদৃশ্য নিঃশব্দ শত্রু আমার
সূক্ষ্ম ব্যাপক বিস্তৃত অপরিচিত।
তবু অচেনা সাহসে ভর করে
চেনা রাস্তা ধরে ছুটে যাই।
যারা রাস্তার দুপাশে হাত দেখায়
তাদের বলে যাই ডেকে,
এখনও সময় আছে,
এই নাও তোমার চারাগাছ।
27/05/2021

বৃহস্পতিবার, ২০ মে, ২০২১

সুদিন এলে তবেই




 যেতে হবে, যেতে হবে, যাবোই তো

যাবোই তো, তবে এই ভাবে কেন? 

যেখানে বাতাসে জলে বিষ বইত

সেখানে গাছগুলো দেখে যাই যেন। 

যেদিন ফুসফুস সবুজ হয়ে উঠবে

গাছের পাতার মতন হেসে হেসে

নাকে সুগন্ধি ফুল ফুটবে,

সেদিন তারা ঘুমপাড়ানি শোনাবে এসে। 


20/05/2021