পরিচালন সমিতি গঠনের পর সভাপতি বা সভানেত্রী ছাড়া বাকিরা ধীরে ধীরে নিজেদের গুটিয়ে নেন। ফলে বিদ্যালয়ের প্রধানের সঙ্গে যদি তার মিল থাকে তাহলে উন্নয়ন না হলেও চলে। বাকিরা একমাত্র আর্থিক অনুদানের খবর পেলেই সক্রিয় হয়ে ওঠেন। ফলে রোজ দিনের তদারকি করা, দফায় দফায় বৈঠক করে যৌথ সিদ্ধান্ত নেওয়া এসব আর হয়ে ওঠে না। এমনটা না হলে তেমন দূরদর্শী ও মজবুত পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। বরং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া দুর্বল হয়ে পড়ে। আর যদি মিল না থাকে তাহলে তো অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
শিক্ষার মান উন্নত করতে হলে পরিচালন সমিতির সদস্যদের প্রশিক্ষণ দরকার। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের ওয়াকিব করা, শিক্ষার্থীদের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলা, শিক্ষকদের জন্য পরিবেশ তৈরি করা, অভিভাবকদের সক্রিয় করা ইত্যাদি অনেক কিছুই করার আছে। কিন্তু সেই সমন্বয় সাধন সম্ভব হয়ে ওঠে না। প্রশিক্ষণের নামে প্রহসন হয়। যথাসম্ভব তাদের কাছে তথ্য গোপন রাখা হয়। এতে যুগপথ ভয় ও চালাকি কাজ করে। এছাড়াও সদস্যদের মধ্যে মতভেদ জিইয়ে রাখারও চেষ্টা চলে।
বেশিরভাগ অভিভাবক সদস্য সচেতন নন। তাই সরকারি প্রতিনিধিরাই সিদ্ধান্ত গ্রহণের মূল কারিগর। অন্যান্য সদস্যরা নিষ্ক্রিয় থাকাই শ্রেয় মনে করেন। কারণ পরিচালন কমিটির ক্ষমতা বলতে সুপারিশ করা ছাড়া তেমন কিছুই নেই। সে সুপারিশ আধিকারিকদের কান পর্যন্ত পৌঁছে না। অনেক ক্ষেত্রে এর দীর্ঘসূত্রিতা নৈরাশ্যের জন্ম দেয়। মনে হয় যেন আর করার কিছুই নেই। এরপরেও রয়েছে অন্যায় আবদার থেকে হুমকি-ধমকি পর্যন্ত। হলে অনেকেই স্বজন পোষণ, পক্ষপাত ইত্যাদিতে বাধ্য হয়ে পড়েন।
যারা আপোষ করতে চান না, তাদের অনেক কসরত করতে হয়। মোকাবেলা করতে হয় অপমান, অপবাদ থেকে শুরু করে মিথ্যা মামলা পর্যন্ত। এত্তসবের বিনিময়ে তাঁদের ব্যক্তিগত প্রাপ্তি বলতে কিছুই থাকে না। বরং গাঁটের পয়সা খরচ করতে হয়, সময় দিতে গিয়ে নিজের পেশায় ধস ধামাতে হয়। ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো আর কি! তাই শিক্ষক ছাড়া অন্য কারো পক্ষে সঠিকভাবে স্কুল পরিচালনা সম্ভব হয় না।