বুধবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২

শিক্ষা ব্যবস্থায় দোষারোপের প্রবণতা: অবসাদ ও আরোগ্য -- ৩

 

হ্যাঁ, বেতন। বেতনটা খুব বেশি নয়। কিন্তু এই বেতনে একটি পরিবার সচ্ছলভাবে চলতে পারে। এই বেতনে সামাজিক মর্যাদা আসে, বাড়ি-গাড়ি করা যায় ইত্যাদি। তাও দোষের নয়। দোষটা তখনই হয় যখন শিক্ষকতার পরিবর্তে বেতনটাকেই সামাজিক মর্যাদা লাভের একমাত্র উপায় হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। এখন আর মর্যাদা লাভের জন্য শিক্ষকতা করতে হয় না। তাহলে কি শিক্ষকরা অভাবের সঙ্গে লড়াই করে টিঁকে থাকবেন? তাদের ভাগ্যে ভালো কিছু জুটবে না?

          ব্যতিক্রমী পেশায় ব্যতিক্রমী জীবনযাত্রা হওয়া চাই। সহজ সাধারণ জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হতে হবে শিক্ষকদের। কিন্তু বিনিময়ে পেতে হবে অফুরান মান-মর্যাদা ও সুযোগ সুবিধা। শিক্ষকদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কোনও কাজে যেন তাদের সময় ও মর্যাদা নষ্ট না হয়। বিনামূল্যে ভালো চিকিৎসার সু্যোগ যেন তাঁরা অনায়াসে পেয়ে যান। সন্তানের ভবিষ্যতের জন্যে যেন তাঁদের দুশ্চিন্তায় ভুগতে না হয়। এতসব মর্যাদার বিনিময়ে যেন তাঁরা মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে নিজেদের জীবনের প্রতিটি মূহুর্ত উজাড় করে দিতে পারেন। এই ব্যবস্থা করাই হোক সরকারের কাজ।

          শিক্ষাগত যোগ্যতা যাই হোক না কেন শিক্ষকদের নিযুক্তি হোক প্রাথমিক স্তরে। কারণ তাঁদের যোগ্যতা ও আগ্রহের ব্যাপারটা এখানেই নিরীক্ষণ হয়ে যাবে। নিজেরাই নিজেদের মূল্যায়ন করতে পারবেন তাঁরা। উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জনের সুবন্দোবস্ত করা হোক তাঁদের জন্য। এরপর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও দক্ষতার ভিত্তিতে তাঁদের পদোন্নতি দেওয়া হোক। এক কথায় সমস্ত শিক্ষা ব্যবস্থাকে একই ছাতার তলায় নিয়ে আসা হোক। নতুবা দোষারোপের প্রবণতা কমবে না। সমগ্র শিক্ষায় প্রয়াস করা হয়েছে কিছুটা, কিন্তু তা পর্যাপ্ত নয়।

        সব বয়স্ক ব্যক্তি মুরুব্বি হয় না। তাই বয়সের ভিত্তিতে বিদ্যালয় প্রধান নিয়োগ কোনো ভাবেই কাম্য নয়। এ ব্যাপারে যোগ্যতা যাচাইয়ের যে সরকারি পদ্ধতি রয়েছে তার অনেকটাই হাস্যকর। বিদ্যালয় প্রধানকে আর্থিক লেনদেন থেকে যথাসম্ভব সরিয়ে রাখা প্রয়োজন।

          শিক্ষকদের বিভিন্ন সংস্থা আছে। এদের কাজ কী তা ঠিক বোঝা যায় না। সদস্যদের অন্যায় আবদারকে প্রশ্রয় না দিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে এদের সক্রিয় ভূমিকা থাকা চাই। অন্যথায় সেদিন আর দেরি নয় যেদিন তাঁদের পেশাটাই বিপদের মুখে পড়ে যাবে। মান-মর্যাদা বাঁচানো দায় হয়ে পড়বে। সামান্য ছোট খাটো দাবি নিয়ে রাস্তায় বসতে হবে তাঁদের। কারণ শিক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার ফলভোগ প্রত্যক্ষভাবে করতে হবে শিক্ষকদেরকেই।……..

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন