শুক্রবার, ১৪ জুন, ২০২৪

শিক্ষা ব্যবস্থায় দোষারোপের প্রবণতা – ৬

কিছু ভয়ে ভয়ে বলছি। সামাজিক মাধ্যমে হোক বা সমাজেই হোক। তর্ক আমি ভয় পাই আজকাল। কারণ তর্ক মানেই গালাগালি, দুর্বলতা খুঁজে খোঁচাখুঁচি, মিথ্যা বলার দক্ষতা।

সমাজটার একটা গভীর অসুখ হয়েছে। নাম দেওয়া যেতে পারে 'শক্তের ভক্ত নরমের যম'।

শিক্ষকরা এখন ধীরে ধীরে সবচেয়ে দুর্বল প্রাণীতে পরিণত হয়ে যাচ্ছেন। একসময় এঁরা এতই দূর্বল হয়ে পড়বেন যে এঁদের আর কোনও দরকার থাকবেই না। 

চতুর্দিকে আঘাত অপমান সহ্য করতে হয় শিক্ষকদের। এখন পড়ুয়ারাও বোঝে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করলেও এদের করার কিচ্ছুটি নেই। অভিভাবকরাও বুঝে নিয়েছেন শিক্ষকের সম্মানের চাইতে দরকারি হল তাঁদের সন্তানের আত্মসম্মান (আসলে জেদ)।  তাই ছাত্ররা সগর্বে ঘোষণা করে, 'বাবাকে বলে তোমাদের জেলে পাঠাবো' ইত্যাদি।

আমি শারীরিক বা মানসিক অত্যাচারের বিরোধী। তা সে শিক্ষক বা পুলিশ বা পরিবারের প্রধান যে কেউ হোন না কেন। কিন্তু তাই বলে শাসন উঠে যাবে তা তো মেনে নেওয়া যায় না। সমাজের শাসন নেই বলেই যত্রতত্র গজিয়ে উঠছে নেশার দোকানদারি আর মাদক সেবনকারীর উঠতি প্রজন্মের দল। শাসন নেই বলেই একদল অভদ্র প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে। শাসন দরকার। তবে শাসন আর অত্যাচার এক নয়। 

আসলে যে রোগের কথা বললাম তার শেকড় রয়েছে অনেক গভীরে। বাইরে তার নজরকাড়া রঙের ডাল-পাতা-ফল-ফুলে সাজানো। শিকড়ে রয়েছে নখ-দাঁত-কাঁটা-বিষ। সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের বেতন কমিয়ে দিন, সম্মান ফিরে আসবে। বেসরকারি স্কুল না থাকলেই ভালো। কারণ গাঁটের পয়সা দিয়ে তো ভৃত্য রাখা হয়, তাকে আর সম্মান কেন দেওয়া!

শিক্ষক তো এই সমাজের মানুষ। ভুল হতে পারে, অপরাধও হতে পারে। তার প্রতিবিধান রয়েছে। শাসনের ব্যবস্থা আছে। খোলা বাজারে তাঁদের অত্যাচার কেন হয়? একজন শিক্ষকের সম্মানহানি মৃত্যুতুল্য।মুসলমান সমাজে একটা কথা শোনা যায়, 'আলিমের বিচার অন্ধকার ঘরে।' একজন অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যায়। শিক্ষক সমাজকে কেন হেনস্তা করা? পারবেন অস্ত্রধারী ফৌজের বিরুদ্ধে এমন কথা বলতে?