সমাজকর্ম আমার আরেক কর্মক্ষেত্র, ঠিক পেশা নয়। ছোটবেলায় গ্রামে ক্লাব গঠন করে খেলা-ধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও সমাজসেবা করেছি। অনেক সংস্থা গঠন

![]() |
বিধায়ক রাজদীপ গোয়ালার সঙ্গে,২০১৮ |
![]() |
মন্ত্রী এসএম দেবের সঙ্গে, দিল্লি, ২০০৪ |
রাজনীতির প্রতি আমার আকর্ষণ ও অনীহা দুটিই আছে। ক্ষমতায় যারা বসে তাঁদের উপর ছড়ি ঘোরানো আমার ভালো লাগে। সেই সুযোগ তো আর সব সময় পাওয়া যায় না, তাই ভোটের সময় একটু ঝাড়-ফুঁক করি। ছোটবেলায় সে সুযোগ পেতামও। নির্বাচনের সময় এলাকার কিশোরদের নিয়ে একটা অফিস করে বসলাম কারো, সেখানে বসে রাজনীতির গল্প শোনা এক বড় মজার ব্যাপার ছিল আমার কাছে। তারও আগে কমরেড নুরুল হুদার সভায় গিয়ে বসতাম স্কুলের মাঠে। লাল সেলাম, ইনকিলাব জিন্দাবাদ, নিপাত যাক এসব স্লোগান শিখেছিলাম ওখানে। কে একজন কিশোর একবার একটা গান গেয়েছিলেন ‘পাকের ঘরে আগুন লাগছে থাল ভরি ভাত খাইতেনি…’ । আবছা মনে পড়ে শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার ছিলেন বোধ হয়। আমার ছোট মামার সাইকেলের পিছনে লেখা থাকত ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’। ছোট নানাজি কমিউনিস্ট ছিলেন। এদিকে লক্ষীপুরে ১৯৮৩ সাল থেকে আমৃত্যু বিধায়ক ছিলেন দীনেশ প্রসাদ গোয়ালা। বাম রাজনীতি ধীরে ধীরে বিলীন হতে শুরু করল। তবে কংগ্রেস তেমন ঘাঁটি গাড়তে পারত না বাঁশকান্দিতে। একবার নেনা মিয়া স্কুলে সন্তোষ মোহন দেবকে অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হয়নি, এমভি স্কুলের সেই সভায় বড় মাপের এই নেতার কাছে বসার সুযোগ পেয়ে খুব খুশি হয়েছিলাম। আর একবার গনি খান চৌধুরিও নেনা মিয়া স্কুলে সভা করতে সমস্যায় পড়েছিলেন, তখনও তাঁর পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ পেয়েছিলাম। আর আসাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আকসার ডাকে শিলচর শহরে গিয়ে জেলে যাওয়াও ছিল আমার ছাত্র রাজনীতি। আমি তখন প্রাথমিক স্তরের ছাত্র। আকসার নামে সি-র সঙ্গে কে ও এইচ লাগল পর্যায়ক্রমে। মনে পড়ে আমাদের জন্যে গাড়ি ও খাওয়ার বন্দোবস্ত করতেন সাংসদ রাণা দেব। আকসার নেতার সঙ্গে আমাদের তেমন পরিচয় ছিল না। একবার সদরঘাট পৌঁছতেই এক দাদা গোছের ছেলে এসে বলল, ‘তোমরা বড্ড দেরি করে আসলে দেখছি। সব্বাইকে ধরে নিয়ে গেছে। ভালোই হল। একটা কাজ তোদের করতে হবে। ওই (সুপার বাস) গাড়িগুলো জ্বালিয়ে দে। কিচ্ছু হবেনা। ভাবিস না।’ আমাদের দলে কয়েকজন বড় ছেলেও ছিল। তারা সুপার বাস পোড়ানোর প্রস্তাবটা গিলে বসল। বেঁকে বসলাম আমি। বললাম, ‘আমি ওসব বাজে কাজে নেই, আমাদের কেউ যাবেও না। আর যদি তোমরা যাও তো আমি এখনই হেঁটে বাড়ি ফিরে যাব।’ অগত্যা সবাই ক্ষান্ত হল। আমরা স্লোগান দিয়ে হাঁটতে শুরু করলাম। দেবদুতের কাছে পৌঁছতেই পুলিশের গাড়ি এসে আমাদের ধরে নিয়ে গেল। আর ওই দাদা ততক্ষণে হাওয়া হয়ে গেল। একবার কিছুদিনের জন্য আসুতেও যোগ দিয়েছিলাম। বর্তমান উপাধ্যক্ষ আমিনুল হক লস্কর সহ অনেকের সঙ্গে পরিচয় হয় এরকম এক পুলিশ হেফাজতে। গণনাট্য সংস্থার সঙ্গে কাজ করে পরিচিত হই নৃত্যগুরু মুকুন্দ ভট্টাচার্য ও অন্যান্য বামপন্থীদের সঙ্গে। কলেজে পড়ার সময় ছাত্র সংসদে নির্দল প্রতিযোগিতা করে হেরেছিলাম। এখনও কোনও দলীয় রাজনীতিতে নেই, তবে নির্বাচন এলে পরিস্থিতি বিবেচনা করে একটু আধটু ঘোরাফেরা করি। তাই রাজনীতি আমার পেশা নয়। আর রাজনীতি কী করে পেশা হয় সেটা বুঝতেও পারি না। কারণ যারা রাজনীতি করে তাঁরা তোলাবাজি বা ঠিকাদারিও করে, সে অন্য পেশা।